রাজধানীসহ সারাদেশে ১৪ পুলিশ কর্মকর্তাসহ একদিনে শতাধিক মানুষ নিহত। আজ লং মার্চ টু ঢাকা।


বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে, এমনকি রাজধানী ঢাকায়ও। সরকার পতনের দাবিতে ছাত্র ও নাগরিকদের আন্দোলনে নামতে প্রস্তুত গোটা দেশ। অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে রক্ত ​​ঝরেছে। অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনী ও ছাত্র-যুব লীগ -আওয়ামী লীগের মধ্যে কখনো দ্বিমুখী, কখনো ত্রিমুখী সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। তাদের মধ্যে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী প্রায় পঞ্চাশ শিক্ষার্থী শহীদ হন। ১৩ জন পুলিশ কর্মকর্তাসহ কয়েকজন নিহত হন। আন্দোলনকারীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে শাহবাগ হয়ে বাংলা মোটরের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি, রাবার বুলেট, স্টান গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশের পাশাপাশি লাঠিসোঁটা, হকি স্টিক ও রামদা নিয়ে সরকারি দলের সমর্থকদের দেখা যায়। নির্বিচারে পুলিশি গুলি ও আইন প্রয়োগকারী ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের প্রতিরোধের মুখে ছাত্র অসন্তোষ ব্যাপক নৈরাজ্যে পরিণত হওয়ায় পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। গতকাল বিকেলে অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কারফিউ প্রত্যাখ্যান করে হামলা, গুলি ও ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি একদিন পিছিয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়। সংগঠনটির অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় এ ঘোষণা দেন এবং জনসংখ্যার মুখোমুখি না হওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন: “এই কারফিউতে তোমাদের অবশ্যই দেশ ও দেশের জনগণকে রক্ষা করতে হবে।” খুনি সরকার বা রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করবেন না, কারণ খুনি সরকার সামরিক বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করতে বাধ্য করার ষড়যন্ত্র করছে। তবে আমি মনে করি সেনাবাহিনী এই ষড়যন্ত্রে যোগ দেবে না। তদুপরি, দেশবাসী চায় সেনাবাহিনী জনগণকে রক্ষা করুক এবং ঘাতক সরকারের গুন্ডাদের প্রতিহত করুক।

অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ বিস্ফোরণের দ্বারপ্রান্তে। সর্বত্র যুদ্ধ ছিল। লেখার সময়, বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ এজেন্ডাকে ঘিরে সংঘর্ষ, গুলি ও পাল্টা নিপীড়নে শতাধিক মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তা ১৪ জন সিরাজগঞ্জের। ১৩ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন এনায়েতপুর থানায় । এ ছাড়া ৮ জন নরসিংদীতে , ফেনীতে ৯ জন, লক্ষ্মীপুরে ১১ জন , ২২ জন সিরাজগঞ্জে (১৩ জন পুলিশ সদস্যসহ), ৪ জন কিশোরগঞ্জে , ৬ জন রাজধানী ঢাকায় , ৫ জন বগুড়ায় , ৩ জন বগুড়ায় নিহত হয়েছেন। ৪ জন মুন্সীগঞ্জে , ৩ জন মাগুরায় , ভোলায় , রংপুরে ৫ জন। ৩ জন পাবনায়, ৫ জন সিলেটে , ৩ জন কুমিল্লায় (একজন পুলিশ), ২ জন শেরপুরে , ১ জন জয়পুরহাটে , ১ জন হবিগঞ্জে , ১ জন ঢাকার কেরানীগঞ্জে , ১ জন সাভারে ও ১ জন বরিশালে । তারা প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় চিকিৎসাধীন অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিত্‍সকরা বলছেন, চিকিৎসাধীন কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।

আন্দোলনকারীরা আজ ঢাকায় লংমার্চের ডাক দিয়েছে, যে তারিখ সামনে আনা হয়েছে। রোববার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সারাদেশের লোকজনকে ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়। আগামী ৬ আগস্ট ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ সফল করতে সারাদেশের শিক্ষার্থী, নাগরিক ও শ্রমিকদের ঢাকায় আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে বিকেলে আরও এক ঘোষণায় আন্দোলনকারীরা আগামী ৫ আগস্ট সোমবার লংমার্চ এগিয়ে আনার ঘোষণা দেন।
বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, একটি জরুরি সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে আমাদের মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ৬ থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। অর্থাৎ সোমবার সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের ঢাকায় আসার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, ঢাকায় আসুন ইতিহাসের অংশ হতে। কাল ঢাকায় চলে আসুন।
রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ ঘোষণা করা হয়। তিনি সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন: “এই কারফিউতে তোমাদের অবশ্যই দেশ ও দেশের জনগণকে রক্ষা করতে হবে।” খুনি সরকার বা রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করবেন না। কারণ সরকার সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করতে বাধ্য করার ষড়যন্ত্র করছে। তবে আমি মনে করি সেনাবাহিনী এই ষড়যন্ত্রে অংশ নেবে না।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সবাইকে একত্রিত হয়ে ঢাকায় আসতে হবে। বিশেষ করে ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে যারা, তারা সবাই ঢাকায় জড়ো হয়েছেন। সেখান থেকেই চূড়ান্ত নির্দেশনা দেওয়া হবে।

দুপুর একটার দিকে আজমপুরে একটি ক্যাম্পে বক্তব্য দিচ্ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিব হাসান। বিক্ষোভকারীরা রাজপথে ছিল। পরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পরস্পর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী, পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে সড়কে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে আগুন: রাজধানীর পরীবাগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আসাদুজ্জামানের অফিসে আগুন দেওয়া হয়। গতকাল দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে। দিনভর রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা না করা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুগ লীগের নেতা-কর্মীদের মুখোমুখি সংঘর্ষে অংশ নিতে দেওয়া হয়েছে।


  • সংশ্লিষ্ট খবর

    ১৮ দাবি জানালেন পোশাক শ্রমিকরা সরকারের কাছে।


         পোশাক শিল্পে অস্থিরতা ও সমস্যা নিরসনে সরকারের কাছে ১৮টি দাবি পেশ করেছেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা। সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক বৈঠকে এসব দাবি উত্থাপন করা হয়। সভায়…


    আরো পড়ুন

    রাজনীতিবিদরা সিদ্ধান্ত নেবেন কখন জাতীয় পরিষদের নির্বাচন হবে, ড. মুহম্মদ ইউনূস।


         ধৈর্য ধরুন নতুন বাংলাদেশ গড়তে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস নতুন বাংলাদেশ গড়তে দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে সূচিত বৈষম্যহীন, শোষণহীন, কল্যাণ ও মুক্ত বাতাসের রাষ্ট্রের…


    আরো পড়ুন

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *